
“দি টাইমস্” পত্রিকার দক্ষ এবং প্রধান সংবাদদাতা রাফার্টি তার গাড়ী থামাল মিঃ আলসোপ-এর খামার বাড়ীর সামনে। কিন্তু সে গাড়ী থেকে নেমে অবাক হয়ে গেল।লোকের ভীড় দেখবার আশা করেছিল সে ।অথচ কোন জনপ্রানী দেখা যাচ্ছে না। কোথাও কেউ নেই। ।পুরনো বাড়ীর দিকে তাকল সে। বাড়ীটি শান্ত - নিস্তব্ধ - শান্তিপূর্ণ। মুরগীর ঘর দেখা যাচ্ছে। খামার বাড়ীর আঙিনা কাদায় ভরা। নড়বড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগল। সাংবাদিককে দেখে মিঃ আলসোপ বারান্দায় বের হয়ে আসলেন। বললেন-
--কাকে চাইছেন?
--আমি ‘দি টাইমস’ এর রাফার্টি।
--রাফার্টি?
বুড়ো যে কাগজ পড়েন না এবং রাফার্টির নাম শোনেনি তা বোঝা গেল।।
--আমাদের পত্রিকাতে কে বা কারা ফোন করে বলেছে যে এখানে একটা প্লেন ভেঙে পড়েছে।আমি তাই সংবাদ সংগ্রহের জন্য এসেছি।
--কই,না…তো!
রাফার্টি বুঝতে পারল মিঃ আলসোপ খুবই ধীর গতিতে চিন্তা করেন। ক্যাচ্ করে দরজা খুলে গেল আর চটপটে মিসেস আলসোপ বেরিয়ে এলেন। রাফার্টি তাকে একই প্রশ্ন আরেকবার করল আর তিনিও একইভাবে বললেন-
--কই,না…তো!
রাফার্টি ঘুরে দাঁড়িয়ে ফিরে যাবার জন্য তৈরী হল।
--যত্তোসব, উড়ো খবর, অথচ ফোনের কলার খুব বিশ্বাসযোগ্যভাবেই বলেছিল যে একটা জ্বলন্ত প্লেন, যার পিছন দিক দিয়ে নাকি আগুন বেরিয়ে আসছিল, তা এই মাঠে এসে পড়েছে।
মিসেস আলসোপকে একটু বিচলিত হতে দেখা গেল।
--ওহ্..হো..হো! ঠিকই তো ! আজ একটা ডানাবিহীন বিশাল বেলুন নিজের থেকেই উড়ে উড়ে মাঠে নেমে এসেছিল। ওখানা তো গুদামঘরের কাছে পড়ে রয়েছে দেখলাম। ওখানা যাদের তারা হাতুড়ি দিয়ে লোহা-লক্কড় বাঁকাতে পারে।
--হুম্!এটাতো অন্ততঃ একটা ছাপানোর মত সংবাদ বলেই মনে হচ্ছে!
মনে মনে বলে রাফার্টি। হয়তঃ রাফার্টির মনের কথাটি বুঝতে পেরেই মিসেস আলসোপ আরও বললেন-
--আপনি চাইলে ওটাকে দেখতে পারেন!
কথা না বাড়িয়ে রাফার্টি আর মিঃ আলসোপ কাদার উপরে ফেলা তক্তার উপর দিয়ে চললেন।
-- আলসোপ দম্পতির মত বোকা আর অদ্ভুত দম্পতি সারাজীবনেও কর্মসূত্রে দেখিনি।
ভাবছিল রাফার্টি আর ভাবতে গিয়েই তার একখানা পা পিছলে পড়বি পড় একেবারে কাদার মধ্যে গিয়ে পড়ল। তারপরও এভাবেই ঘরের মধ্যে গিয়ে দেখে জিনিসটা বিরাট আকারের ‘প্লাস্টিক’এর বেলুনের মত। বেলুনের মাথার দিকটা গোল আর তলার দিকটা চ্যাপ্টা।
--মহাকাশযান সম্র্পকে কোন উন্মত্ত কল্পনার ফসল।
ভাবল রাফার্টি আর মনের চোখে দিব্য দৃষ্টিতে নিজের পত্রিকার প্রথম পাতায় বড় বড় হরফে ছাপা হেডলাইনটা--
--চাঁদে প্রমোদভ্রমনের নামে অজপাড়াগাঁয়ের এক কৃষকের রকেট-চালিত মহাকাশযান নির্মাণ।
ব্যাপারটা মিঃ আলসোপের দৃষ্টি আকর্ষন করাতে তিনি বললেন-
--ওতে করে আমার কয়েকজন বন্ধু এসেছে।
তার কথায় পাত্তা না দিয়ে যেই না একটু এগিয়েছে অমনি রাফার্টি চীৎকার দিয়ে উঠে পা ঘসতে লাগল। মিঃ আলসোপ বললেন-
--বাচ্চাদের দূরে সরিয়ে রাখবার জন্যই হয়তঃবা বেলুনকে ঘিরে একটা অদৃশ্য দেয়াল দেয়া আছে। কি বুঝলেন?
তার কথায় উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল-
--আপনার বন্ধুরা কোথায়?
--তারা বাড়ীর ভেতরে। আপনি চাইলে তাদেরকেও দেখতে পারেন!ছ’বছর আগে তারা এখানে প্রথম এসেছিল।মুরগীর ডিম চাঁদে চাষ করতে চায় তাই ওদের চাষের জন্য আমি একটা বাক্স বানিয়ে দিয়েছি।
ঘরে গিয়ে রাফার্টি দেখল এক পুরুষ আর এক নারীর মুখমুখি বসে আছেন মিসেস আলসোপ। তাদের দেহের শুঁড়গুলো আন্দোলিত হচ্ছে এদিক-উদিকে। ভাবলেসহীন মুখে বিশাল দুটি চোখ দেখেও মনে হচ্ছিল ওরা মুখোস পড়েছে নয়ত ওদের মুখখানা কেউ এঁকে দিয়েছে। বিস্ফারিত নেত্রে রাফার্টি বাকশক্তিহীন হয়ে পড়ল। তারপরও সে বিড় বিড় করে মনকে প্রবোধ দিল-
--এসব লোক ঠকাবার কৌশলে তুমি বিভ্রান্ত হয়ো না।তোমার ভিতরকার সাংবাদিক সত্তা যাতে সদাসতর্ক থাকে।
কাঁপা কাঁপা গলাকে লুকিয়ে বলল-
--নাম কি ওদের?
--ওরা নাম বলে না,শুধু মনের মধ্যে ছবি বানায়। আর ওদের শুঁড় দিয়ে যখন কারো দিকে লক্ষ্য করে তাক করে তখন ওরা যা চিন্তা করে তাই ঐ লোকটির মাথায় সঞ্চারিত হয়!
--কোথা থেকে এল ওরা?
--একবার জিজ্ঞেস করে দেখি।
বলে মিসেস আলসোপ প্রশ্নটি করলেন। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির শুঁড় রাফার্টির কপালের মাঝে জায়গাটা লক্ষ্য করে তাক করল। হঠাৎ রাফার্টির মনে হল, তার রাবারের মত মনে হওয়া মাথাটাকে যেন কেউ বাঁকিয়ে,আঘাত করে নতুন রূপ দিচ্ছে। মনে হল যেন সীমাহীন নক্ষত্র , গ্রহ আর উল্কাপিন্ডের মহাশূন্যের মধ্যে দিয়ে এসে পড়ল এক অতি উজ্জল তারকার জগতে। এরপর, ছবি অদৃশ্য হয়ে গেল। তখন তার শরীর থরথর করে কাঁপছে। সে উত্তেজিতভাবে বলল-
--এ কোন ধাপ্পা নয়! এরা সত্যিই গ্রহান্তরের জীব! পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রত্যক্ষ এবং সংগ্রহ করলাম আমি! কিন্ত আপনাদের ফোনটা কোথায়?
--ফোন তো নেই!ফোনের আর দরকারই বা কি!কারন কয়েক সেকেন্ড পরই তো ওরা চলে যাবে!
রাফার্টি বুঝতে পারল না সে কি বলবে কিংবা করবে।অবশ্য তার মাথা বলছে-
--এই সংবাদ পরিবেশন করতে পারলে তুমি তো খ্যাতির চূড়ায় পৌছে যাবে হে!এক্ষুনি কাজে ঝাঁপিয়ে পড়!
রাফার্টি খুব জোরে বলল-
--একখানা ক্যামেরাও কি আপনাদের নেই?
--নিশ্চয়ই আছে!তবে খুঁজতে হবে!
--তাহলে খুঁজুন আর মরুন কিংবা খুঁজতে খুঁজতে মরুন!
মিঃ আলসোপ অনিচ্ছাসত্তেও গরু খোঁজার মতই ক্যামেরার খোঁজে পাশের ঘরে গেলেন এবং কিছুক্ষন যেতে না যেতেই ব্যাজার মুখে বেরিয়ে এসে বললেন-
--অত্যন্ত দুঃখের এবং অনুতাপের বিষয় হল ক্যামেরায় ফিল্ম ভরা নেই,তাই ছবি তোলা যাবে না!
এদিকে রাফার্টির কিছু বুঝে উঠার আগেই গ্রহান্তরের জীবদুটো একই সঙ্গে জোনাকীর মত রাফার্টির বিস্ফারিত চোখের সামনে বেলুনে চড়ে উড়ে গেল!
--এইইযযা!পাখি যে উড়ে গেলো!
মিঃ এবং মিসেস আলসোপের একই সঙ্গে ব্যঙ্গ-উচ্চারণ! পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে বড় ঘটনা শূন্যপথে কর্পূরের মত উবে গেল!কতটুকু আর তথ্য আছে তার হাতে?যে পুরুষটি লোহা বাঁকায় সে নিশ্চয়ই কর্মকার! পৃথিবী থেকে ডিম নিয়েছে তারা! রাফার্টির হতবুদ্ধি ভাবটা কেটে গেল।মাথাটা কিছুটা পরিস্কার হল।আছে…আছে…হয়ত এখনও বিশ্বাস করবার মত প্রমাণ রয়েছে!
--গ্রহান্তরের জীবদুটো কি ডিমের বদলে আপনাকে কিছু দিয়েছে?
--ছ’বছর আগে ওরা ওদের সাথে যে ডিমগুলো এনেছিল তাই আমাদের দিয়েছিল। ঐ তারার মত ডিমগুলো থেকে যখন বাচ্চা বেরুল তখন ঠাট্টা করে নাম দিয়েছিলাম ‘তারার হাঁস’। যে বুড়ী মুরগীটা ডিমে তা দিয়েছিল ডিমের ছুঁচাল দিকগুলো তাকে তা দেয়ার সময় বড় কষ্ট দিয়েছিল! তারার হাঁসগুলো চোখে দেখার চেয়ে চেখে দেখা ঢের মজা এবং সুস্বাদু ছিল!বড়দিনের সময় রোষ্ট করে খেয়েছি!মুখে এখনো স্বোয়াদ লেগে আছে!
--আর!তাদের কন্কাল?ওগুলোও কি তাহলে….?
--নান্…না! ছি! কি যা তা বলছেন! সে হাড়গুলি আমাদের কুকুরটাকে দিয়েছিলাম! তাও পাঁচ বছর আগের কথা! চার বছর আগে কুকুরটা ঐ গ্রহান্তরের জীবদুটোর মত এখান থেকে সটকেছে!
স্বপ্নাছ্ছন্নের মত রাফার্টি তার টুপিটা তুলল। নিতান্ত যাণ্ত্রিকভাবে বলল-
--ধন্যবাদ,মিঃ আলসোপ, ধন্যবাদ!
মেঘলা আকশের দিকে তাকল রাফার্টি। গ্রহান্তরের জীবদুটো এতক্ষনে মহাকাশযানে করে চলে গিয়েছে বহু দূরে।
কিন্তু তাদের পৃথিবীতে আগমনের কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই তার কাছে! রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন মিঃ আলসোপ। তিনি জামার আস্তিন দিয়ে একটা বক্স ক্যামেরার উপরে জমে থাকা ধুলো ঝাড়ছিলেন! রাফার্টির দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে তিনি বললেন-
--মিঃ রাফার্টি!অবশেষে হতভাগা ক্যামেরাকে খুঁজে পেয়েছি!
মূল: দ্য ষ্টার ডাক্স - বিল ব্রাউন
অনুবাদ : রাশিদুল ইসলাম
রাশিদুল ইসলাম © ২০০৯
--কাকে চাইছেন?
--আমি ‘দি টাইমস’ এর রাফার্টি।
--রাফার্টি?
বুড়ো যে কাগজ পড়েন না এবং রাফার্টির নাম শোনেনি তা বোঝা গেল।।
--আমাদের পত্রিকাতে কে বা কারা ফোন করে বলেছে যে এখানে একটা প্লেন ভেঙে পড়েছে।আমি তাই সংবাদ সংগ্রহের জন্য এসেছি।
--কই,না…তো!
রাফার্টি বুঝতে পারল মিঃ আলসোপ খুবই ধীর গতিতে চিন্তা করেন। ক্যাচ্ করে দরজা খুলে গেল আর চটপটে মিসেস আলসোপ বেরিয়ে এলেন। রাফার্টি তাকে একই প্রশ্ন আরেকবার করল আর তিনিও একইভাবে বললেন-
--কই,না…তো!
রাফার্টি ঘুরে দাঁড়িয়ে ফিরে যাবার জন্য তৈরী হল।
--যত্তোসব, উড়ো খবর, অথচ ফোনের কলার খুব বিশ্বাসযোগ্যভাবেই বলেছিল যে একটা জ্বলন্ত প্লেন, যার পিছন দিক দিয়ে নাকি আগুন বেরিয়ে আসছিল, তা এই মাঠে এসে পড়েছে।
মিসেস আলসোপকে একটু বিচলিত হতে দেখা গেল।
--ওহ্..হো..হো! ঠিকই তো ! আজ একটা ডানাবিহীন বিশাল বেলুন নিজের থেকেই উড়ে উড়ে মাঠে নেমে এসেছিল। ওখানা তো গুদামঘরের কাছে পড়ে রয়েছে দেখলাম। ওখানা যাদের তারা হাতুড়ি দিয়ে লোহা-লক্কড় বাঁকাতে পারে।
--হুম্!এটাতো অন্ততঃ একটা ছাপানোর মত সংবাদ বলেই মনে হচ্ছে!
মনে মনে বলে রাফার্টি। হয়তঃ রাফার্টির মনের কথাটি বুঝতে পেরেই মিসেস আলসোপ আরও বললেন-
--আপনি চাইলে ওটাকে দেখতে পারেন!
কথা না বাড়িয়ে রাফার্টি আর মিঃ আলসোপ কাদার উপরে ফেলা তক্তার উপর দিয়ে চললেন।
-- আলসোপ দম্পতির মত বোকা আর অদ্ভুত দম্পতি সারাজীবনেও কর্মসূত্রে দেখিনি।
ভাবছিল রাফার্টি আর ভাবতে গিয়েই তার একখানা পা পিছলে পড়বি পড় একেবারে কাদার মধ্যে গিয়ে পড়ল। তারপরও এভাবেই ঘরের মধ্যে গিয়ে দেখে জিনিসটা বিরাট আকারের ‘প্লাস্টিক’এর বেলুনের মত। বেলুনের মাথার দিকটা গোল আর তলার দিকটা চ্যাপ্টা।
--মহাকাশযান সম্র্পকে কোন উন্মত্ত কল্পনার ফসল।
ভাবল রাফার্টি আর মনের চোখে দিব্য দৃষ্টিতে নিজের পত্রিকার প্রথম পাতায় বড় বড় হরফে ছাপা হেডলাইনটা--
--চাঁদে প্রমোদভ্রমনের নামে অজপাড়াগাঁয়ের এক কৃষকের রকেট-চালিত মহাকাশযান নির্মাণ।
ব্যাপারটা মিঃ আলসোপের দৃষ্টি আকর্ষন করাতে তিনি বললেন-
--ওতে করে আমার কয়েকজন বন্ধু এসেছে।
তার কথায় পাত্তা না দিয়ে যেই না একটু এগিয়েছে অমনি রাফার্টি চীৎকার দিয়ে উঠে পা ঘসতে লাগল। মিঃ আলসোপ বললেন-
--বাচ্চাদের দূরে সরিয়ে রাখবার জন্যই হয়তঃবা বেলুনকে ঘিরে একটা অদৃশ্য দেয়াল দেয়া আছে। কি বুঝলেন?
তার কথায় উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল-
--আপনার বন্ধুরা কোথায়?
--তারা বাড়ীর ভেতরে। আপনি চাইলে তাদেরকেও দেখতে পারেন!ছ’বছর আগে তারা এখানে প্রথম এসেছিল।মুরগীর ডিম চাঁদে চাষ করতে চায় তাই ওদের চাষের জন্য আমি একটা বাক্স বানিয়ে দিয়েছি।
ঘরে গিয়ে রাফার্টি দেখল এক পুরুষ আর এক নারীর মুখমুখি বসে আছেন মিসেস আলসোপ। তাদের দেহের শুঁড়গুলো আন্দোলিত হচ্ছে এদিক-উদিকে। ভাবলেসহীন মুখে বিশাল দুটি চোখ দেখেও মনে হচ্ছিল ওরা মুখোস পড়েছে নয়ত ওদের মুখখানা কেউ এঁকে দিয়েছে। বিস্ফারিত নেত্রে রাফার্টি বাকশক্তিহীন হয়ে পড়ল। তারপরও সে বিড় বিড় করে মনকে প্রবোধ দিল-
--এসব লোক ঠকাবার কৌশলে তুমি বিভ্রান্ত হয়ো না।তোমার ভিতরকার সাংবাদিক সত্তা যাতে সদাসতর্ক থাকে।
কাঁপা কাঁপা গলাকে লুকিয়ে বলল-
--নাম কি ওদের?
--ওরা নাম বলে না,শুধু মনের মধ্যে ছবি বানায়। আর ওদের শুঁড় দিয়ে যখন কারো দিকে লক্ষ্য করে তাক করে তখন ওরা যা চিন্তা করে তাই ঐ লোকটির মাথায় সঞ্চারিত হয়!
--কোথা থেকে এল ওরা?
--একবার জিজ্ঞেস করে দেখি।
বলে মিসেস আলসোপ প্রশ্নটি করলেন। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির শুঁড় রাফার্টির কপালের মাঝে জায়গাটা লক্ষ্য করে তাক করল। হঠাৎ রাফার্টির মনে হল, তার রাবারের মত মনে হওয়া মাথাটাকে যেন কেউ বাঁকিয়ে,আঘাত করে নতুন রূপ দিচ্ছে। মনে হল যেন সীমাহীন নক্ষত্র , গ্রহ আর উল্কাপিন্ডের মহাশূন্যের মধ্যে দিয়ে এসে পড়ল এক অতি উজ্জল তারকার জগতে। এরপর, ছবি অদৃশ্য হয়ে গেল। তখন তার শরীর থরথর করে কাঁপছে। সে উত্তেজিতভাবে বলল-
--এ কোন ধাপ্পা নয়! এরা সত্যিই গ্রহান্তরের জীব! পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রত্যক্ষ এবং সংগ্রহ করলাম আমি! কিন্ত আপনাদের ফোনটা কোথায়?
--ফোন তো নেই!ফোনের আর দরকারই বা কি!কারন কয়েক সেকেন্ড পরই তো ওরা চলে যাবে!
রাফার্টি বুঝতে পারল না সে কি বলবে কিংবা করবে।অবশ্য তার মাথা বলছে-
--এই সংবাদ পরিবেশন করতে পারলে তুমি তো খ্যাতির চূড়ায় পৌছে যাবে হে!এক্ষুনি কাজে ঝাঁপিয়ে পড়!
রাফার্টি খুব জোরে বলল-
--একখানা ক্যামেরাও কি আপনাদের নেই?
--নিশ্চয়ই আছে!তবে খুঁজতে হবে!
--তাহলে খুঁজুন আর মরুন কিংবা খুঁজতে খুঁজতে মরুন!
মিঃ আলসোপ অনিচ্ছাসত্তেও গরু খোঁজার মতই ক্যামেরার খোঁজে পাশের ঘরে গেলেন এবং কিছুক্ষন যেতে না যেতেই ব্যাজার মুখে বেরিয়ে এসে বললেন-
--অত্যন্ত দুঃখের এবং অনুতাপের বিষয় হল ক্যামেরায় ফিল্ম ভরা নেই,তাই ছবি তোলা যাবে না!
এদিকে রাফার্টির কিছু বুঝে উঠার আগেই গ্রহান্তরের জীবদুটো একই সঙ্গে জোনাকীর মত রাফার্টির বিস্ফারিত চোখের সামনে বেলুনে চড়ে উড়ে গেল!
--এইইযযা!পাখি যে উড়ে গেলো!
মিঃ এবং মিসেস আলসোপের একই সঙ্গে ব্যঙ্গ-উচ্চারণ! পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে বড় ঘটনা শূন্যপথে কর্পূরের মত উবে গেল!কতটুকু আর তথ্য আছে তার হাতে?যে পুরুষটি লোহা বাঁকায় সে নিশ্চয়ই কর্মকার! পৃথিবী থেকে ডিম নিয়েছে তারা! রাফার্টির হতবুদ্ধি ভাবটা কেটে গেল।মাথাটা কিছুটা পরিস্কার হল।আছে…আছে…হয়ত এখনও বিশ্বাস করবার মত প্রমাণ রয়েছে!
--গ্রহান্তরের জীবদুটো কি ডিমের বদলে আপনাকে কিছু দিয়েছে?
--ছ’বছর আগে ওরা ওদের সাথে যে ডিমগুলো এনেছিল তাই আমাদের দিয়েছিল। ঐ তারার মত ডিমগুলো থেকে যখন বাচ্চা বেরুল তখন ঠাট্টা করে নাম দিয়েছিলাম ‘তারার হাঁস’। যে বুড়ী মুরগীটা ডিমে তা দিয়েছিল ডিমের ছুঁচাল দিকগুলো তাকে তা দেয়ার সময় বড় কষ্ট দিয়েছিল! তারার হাঁসগুলো চোখে দেখার চেয়ে চেখে দেখা ঢের মজা এবং সুস্বাদু ছিল!বড়দিনের সময় রোষ্ট করে খেয়েছি!মুখে এখনো স্বোয়াদ লেগে আছে!
--আর!তাদের কন্কাল?ওগুলোও কি তাহলে….?
--নান্…না! ছি! কি যা তা বলছেন! সে হাড়গুলি আমাদের কুকুরটাকে দিয়েছিলাম! তাও পাঁচ বছর আগের কথা! চার বছর আগে কুকুরটা ঐ গ্রহান্তরের জীবদুটোর মত এখান থেকে সটকেছে!
স্বপ্নাছ্ছন্নের মত রাফার্টি তার টুপিটা তুলল। নিতান্ত যাণ্ত্রিকভাবে বলল-
--ধন্যবাদ,মিঃ আলসোপ, ধন্যবাদ!
মেঘলা আকশের দিকে তাকল রাফার্টি। গ্রহান্তরের জীবদুটো এতক্ষনে মহাকাশযানে করে চলে গিয়েছে বহু দূরে।
কিন্তু তাদের পৃথিবীতে আগমনের কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই তার কাছে! রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন মিঃ আলসোপ। তিনি জামার আস্তিন দিয়ে একটা বক্স ক্যামেরার উপরে জমে থাকা ধুলো ঝাড়ছিলেন! রাফার্টির দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে তিনি বললেন-
--মিঃ রাফার্টি!অবশেষে হতভাগা ক্যামেরাকে খুঁজে পেয়েছি!
মূল: দ্য ষ্টার ডাক্স - বিল ব্রাউন
অনুবাদ : রাশিদুল ইসলাম
রাশিদুল ইসলাম © ২০০৯
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন